This is this sidebar for a particular page. It can be edited by editing a page from within the control pannel.
১“আর ঈশ্বর এই সমস্ত কথা বললেন।”
এটি সেই মুহূর্তকে নির্দেশ করে যখন ঈশ্বর নিজে সরাসরি দশ আজ্ঞা ঘোষণা করেছিলেন, যা পরবর্তীকালে মোশি বা মূসার মাধ্যমে ইস্রায়েলীয়দের দেওয়া হয়।
২“আমি তোমাদের ঈশ্বর, যিনি তোমাদের মিশর দেশ থেকে,
দাসত্বের স্থান থেকে বের করে এনেছি।”
ঈশ্বর নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন এবং ইস্রায়েলীয়দের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে তিনিই তাদের মুক্ত করেছেন, তাই তিনিই তাদের উপাসনার যোগ্য।
৩“তোমরা আমার সামনে অন্য কোনো দেবতাকে স্থান দেবে না।”
এখানে স্পষ্টভাবে একেশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঈশ্বর চান যে তাঁর জাতি কেবল তাঁর উপাসনা করুক এবং অন্য কোনো মূর্তি বা দেবতার উপাসনা না করুক।
৪ “তোমরা নিজের জন্য কোনো মূর্তি তৈরি করবে না, যা স্বর্গে, পৃথিবীতে, বা জলাশয়ের মধ্যে রয়েছে।
ঈশ্বর স্পষ্টভাবে আদেশ দিয়েছেন যে মানুষ যেন কোনো ধরণের মূর্তি বা প্রতিমা তৈরি না করে, যা আকাশে, মাটিতে বা জলের নিচে বিদ্যমান কিছুকে প্রতিনিধিত্ব করে। এটি বোঝায় যে ঈশ্বর চান মানুষ কেবল তাঁকেই উপাসনা করুক এবং কোনো সৃষ্টি বা প্রতিমাকে দেবতা হিসেবে না দেখুক।
৫”তোমরা তাদের সামনে নত হবে না বা পূজা করবে না, কারণ আমি, তোমাদের ঈশ্বর, ঈর্ষান্বিত ঈশ্বর। যারা আমাকে ঘৃণা করে, তাদের সন্তানদের তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্ম পর্যন্ত শাস্তি দিই;
ঈশ্বর আরও গভীরভাবে বোঝাচ্ছেন যে মূর্তিপূজা বা অন্য দেবতাকে উপাসনা করা তাঁর প্রতি অবিশ্বাস ও বিদ্রোহ প্রকাশ করে। তিনি নিজেকে "ঈর্ষান্বিত ঈশ্বর" বলেছেন, অর্থাৎ তিনি চান যে তাঁর উপাসকরা কেবল তাঁকেই ভালোবাসবে এবং অন্য কোনো দেবতার দিকে আকৃষ্ট হবে না।
৬”কিন্তু যারা আমাকে ভালোবাসে ও আমার আদেশ মানে, তাদের হাজার প্রজন্ম পর্যন্ত দয়া করি।”
কিন্তু যারা ঈশ্বরকে ভালোবাসে এবং তাঁর আদেশ মেনে চলে, তাদের প্রতি ঈশ্বর হাজার প্রজন্ম পর্যন্ত করুণা ও আশীর্বাদ করবেন। এটি ঈশ্বরের অসীম দয়া ও ভালোবাসার প্রতিফলন।
৭“তোমরা আমার নাম বৃথা ব্যবহার করবে না, কারণ আমি সেই ব্যক্তিকে দোষী বলব, যে আমার নাম বৃথা নেয়।”
ঈশ্বরের নাম সম্মানের সাথে ব্যবহার করতে হবে, এবং মিথ্যা শপথ বা অভিশাপে তাঁর নাম নেওয়া পাপ।
৮ “বিশ্রাম দিবস (সাবাথ) স্মরণ করো এবং সেটিকে পবিত্র রাখো।
ঈশ্বর বলেছেন, “সাবাথকে স্মরণ করো”, অর্থাৎ এটি শুধুমাত্র শারীরিক বিশ্রামের জন্য নয়, বরং ঈশ্বরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনেরও একটি উপায়। এটি উপাসনার জন্য নির্ধারিত দিন, যা পরবর্তীকালে ইহুদিদের জন্য শনিবার এবং খ্রিস্টানদের জন্য রবিবার হিসাবে পালন করা হয়।
৯ “ছয় দিন তোমরা পরিশ্রম করে তোমাদের সমস্ত কাজ সম্পন্ন করবে,
ছয় দিন কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা নির্দেশ করে যে পরিশ্রম ও কর্মঠ জীবন ঈশ্বরের পরিকল্পনার অংশ। কিন্তু সপ্তম দিনটি আলাদা করে রাখা হয়েছে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে।
১০ “কিন্তু সপ্তম দিনটি তোমাদের ঈশ্বরের জন্য সাবাথ (বিশ্রামের দিন)। এই দিনে কোনো কাজ করবে না—তুমি, তোমার পুত্র-কন্যা, তোমার দাস-দাসী, তোমার গবাদি পশু, অথবা তোমার নগরে বসবাসরত কোনো বিদেশী।”
সাবাথ দিবসে কেউই কোনো কাজ করবে না—পরিবারের সদস্য, চাকর-চাকরানি, এমনকি পশু এবং বিদেশীরাও এই আদেশের অন্তর্ভুক্ত। এটি দেখায় যে ঈশ্বরের আইন সমাজের সব স্তরের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।
১১”কারণ ছয় দিনে ঈশ্বর স্বর্গ, পৃথিবী, সমুদ্র এবং সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু সপ্তম দিনে বিশ্রাম নিয়েছেন। এজন্যই ঈশ্বর সাবাথ দিনকে আশীর্বাদ করেছেন এবং পবিত্র করেছেন।”
এই আয়াতে ঈশ্বর তাঁর সৃষ্টির কাজের উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন কেন এই আদেশ গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বর ছয় দিনে বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন এবং সপ্তম দিনে বিশ্রাম নিয়েছেন। তাই তিনি এই দিনটিকে আশীর্বাদ করেছেন এবং পবিত্র করেছেন।
১২“তোমরা তোমাদের পিতা-মাতাকে সম্মান করো, যাতে তোমাদের আয়ু দীর্ঘ হয় এবং তোমাদের ঈশ্বর যে দেশ দিচ্ছেন, সেখানে ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারো।”
পিতা-মাতাকে সম্মান করা ঈশ্বরের একটি বড়ো আদেশ। এটি কেবল ব্যক্তিগত আশীর্বাদ আনে না, বরং সমাজের সুস্থিতি নিশ্চিত করে।
১৩“তোমরা হত্যা করো না।”
ঈশ্বর হত্যাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। এটি জীবন রক্ষার গুরুত্বকে বোঝায়।
১৪“তোমরা ব্যভিচার করো না।”
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিষিদ্ধ। বিশ্বাসঘাতকতা পারিবারিক ও সামাজিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে।
১৫“তোমরা চুরি করো না।”
চুরি কেবল ব্যক্তি বা সম্পদের ক্ষতি করে না, বরং সমাজে অবিশ্বাস সৃষ্টি করে।
১৬“তোমরা তোমার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে না।”
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সত্য কথা বলা জরুরি। মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে।
১৭“তোমরা তোমার প্রতিবেশীর ঘর, স্ত্রী, দাস-দাসী, পশু বা অন্য কিছু কামনা করো না।”
লোভ ও ঈর্ষা মানুষকে পাপের পথে নিয়ে যেতে পারে। অন্যের সম্পদ বা জীবন কামনা করা আত্মিক দূষণ সৃষ্টি করে।
১৮“যখন লোকেরা বজ্রধ্বনি, বিদ্যুৎ ঝলক, শিঙ্গার শব্দ এবং ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন পর্বত দেখল, তখন তারা ভয়ে কাঁপতে লাগল। তারা দূরে দাঁড়িয়ে রইল।”
ঈশ্বর যখন দশ আদেশ দিচ্ছিলেন, তখন প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে তাঁর মহিমা ও ক্ষমতা প্রকাশ পাচ্ছিল—বজ্রধ্বনি, বিদ্যুৎ, শিঙ্গার শব্দ ও ধোঁয়ায় পর্বত কেঁপে উঠছিল।ইস্রায়েলীয়রা এতটাই ভীত হয়ে গেল যে তারা ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে গেল।
১৯“তারা মোশিকে বলল, ‘তুমি আমাদের সঙ্গে কথা বলো, আমরা শুনব। কিন্তু ঈশ্বর যেন আমাদের সঙ্গে কথা না বলেন, নইলে আমরা মরে যাব!’”
লোকেরা ভয় পেয়ে ঈশ্বরের সরাসরি কণ্ঠস্বর শুনতে চাইল না।তারা মনে করেছিল, ঈশ্বরের গম্ভীর কণ্ঠস্বর ও উপস্থিতির শক্তির কারণে তারা হয়তো মারা যাবে।তাই তারা চাইল যে মোশি বা মূসা তাদের পক্ষে ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলুক।
২০“মোশি বললেন, ‘ভয় পেয়ো না! ঈশ্বর তোমাদের পরীক্ষা করতে এসেছেন, যাতে তোমাদের মধ্যে তাঁর ভয় থাকে এবং তোমরা পাপ থেকে বিরত থাকো।’”
মোশি বা মূসা লোকদের শান্ত করেন এবং ব্যাখ্যা করেন যে ঈশ্বর তাদের ক্ষতি করতে চান না।বরং এই মহাশক্তির প্রকাশ একটি পরীক্ষা, যাতে তারা ঈশ্বরকে ভয় করে এবং পাপ থেকে দূরে থাকে।এটি দেখায় যে ঈশ্বরের ভয় আমাদের ন্যায়ের পথে চলতে সাহায্য করে।
২১“লোকেরা দূরে দাঁড়িয়ে থাকল, কিন্তু মোশি ঈশ্বরের উপস্থিতির গভীর অন্ধকারে প্রবেশ করলেন।”
লোকেরা ঈশ্বরের মহিমা থেকে দূরে থাকল, কারণ তারা ভয় পেত।
কিন্তু মোশি বা মূসা সাহস নিয়ে ঈশ্বরের কাছে গেলেন, কারণ তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন।এটি দেখায় যে যারা ঈশ্বরের কাছাকাছি যেতে চায়, তাদের বিশ্বাস ও আস্থা থাকা প্রয়োজন।
২২“তখন ঈশ্বর মোশিকে বললেন, ‘ইস্রায়েলীয়দের বলো: তোমরা নিজের চোখে দেখেছ, আমি আকাশ থেকে তোমাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’”
ঈশ্বর সরাসরি ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন, এটি তাদের জন্য একটি অনন্য অভিজ্ঞতা।এটি তাদের মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে।
২৩“তোমরা আমার সঙ্গে কোনো দেবতাকে রাখবে না; তোমরা রূপার বা সোনার দেবতা তৈরি করবে না।”
এটি দ্বিতীয় আদেশের পুনরাবৃত্তি, যেখানে ঈশ্বর মূর্তি পূজা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।ঈশ্বর চান যে তাঁর উপাসকরা কেবলমাত্র তাঁর উপাসনা করুক এবং মূর্তি বা প্রতিমার আশ্রয় না নিক।
২৪“আমার জন্য মাটি দিয়ে একটি বেদি বানিয়ে তার উপর তোমার পুড়ানো উৎসর্গ এবং শান্তির উৎসর্গ দেবে—তোমার ভেড়া, ছাগল ও গরু। যেখানে আমি আমার নামে সম্মান লাভ করব, সেখানে আমি আসব এবং তোমাকে আশীর্বাদ করব।”
ঈশ্বর বলছেন যে ইস্রায়েলীয়রা যেন একটি সাধারণ মাটির বেদি তৈরি করে, যাতে তারা তাঁকে পবিত্র বলিদান দিতে পারে।ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, যেখানে তাঁর নাম সম্মানিত হবে, সেখানে তিনি আসবেন এবং আশীর্বাদ দেবেন।
২৫“যদি তুমি আমার জন্য পাথরের বেদি তৈরি করো, তবে তা খোদাই করা পাথর দিয়ে বানাবে না। কারণ যদি তুমি তাতে হাতিয়ার ব্যবহার করো, তবে সেটি অপবিত্র হয়ে যাবে।”
ঈশ্বর চান যে বেদি যেন স্বাভাবিক এবং মানুষের কারিগরির দ্বারা পরিবর্তিত না হয়।হাতিয়ার দিয়ে খোদাই করা পাথর মানুষের অহংকার ও শৈল্পিক গর্বের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে, যা ঈশ্বর চান না।
২৬“তোমরা যেন আমার বেদিতে সিঁড়ি দিয়ে ওঠো না, যাতে তোমাদের নগ্নতা প্রকাশ না হয়।”
পুরানো দিনে, লোকেরা যখন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠত, তখন তাদের পোশাক সরে গিয়ে অশালীন দৃশ্য দেখা যেতে পারত।ঈশ্বর চান যে উপাসনা পবিত্র এবং শালীন হোক।