This is this sidebar for a particular page. It can be edited by editing a page from within the control pannel.
কেমন লাগতো যদি সৃষ্টিকর্তা আপনাকে বলতো আপনার নিজের সন্তানকে উৎসর্গ করতে হবে ? আপনি কি তা করতে পারতেন? ঈশ্বরের দেওয়া উপহারই যখন তিনি আমাদের থেকে ফেরত চান তখন আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত? আমাদের বিশ্বাস কতটুকু মজবুত ? আসুন দেখি বিশ্বাসের আদিপিতা অব্রাহামের জীবনী থেকে যে তিনি কিভাবে ঈশ্বরের এই মহাপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
প্রেক্ষাপটঃ
বাইবেলে আমরা দেখি অব্রাহামের যখন ৭৫ বছর বয়স তখন সৃষ্টিকর্তা তাকে হারনে তার পরিবার ত্যাগ করতে বলেন এবং তার মাধ্যমে এক মহাজাতি সৃষ্টি করার প্রতিজ্ঞা করেন (আদি ১২:১-৩)। এ সময় পর্যন্তও অব্রাহামের কোনো সন্তান ছিল না। পরবর্তিতে ঈশ্বর স্পষ্টভাবে অব্রাহামকে একজন উত্তরাধিকারীর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অব্রাহামের বয়স যখন ৯৯ তখন পুনরায় ঈশ্বর সারার গর্ভ থেকে সন্তান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। অব্রাহাম যখন ১০০ তখন সারার মাধ্যমে ইসহাকের জন্ম হয়। ঈশ্বরের দেওয়া প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়িত হতে সময় লেগেছে ২৫ বছরের মত!
কি ঘটবে যখন ঈশ্বর বলবেন এই ইসহাকঃঅব্রাহামের প্রতিজ্ঞাত সন্তানকে মোরিয়া এলাকায় গিয়ে উৎসর্গ করতে ?
সৃষ্টিকর্তার মর্মান্তিক অনুরোধঃ
বিশ্বাসের পিতৃপুরুষদের ইতিহাসে সবচেয়ে গভীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হল অব্রাহামের এই মহাপরীক্ষা। ভয়ঙ্কর এক পরীক্ষার মাধ্যমে আব্রাহামকে তার বিশ্বাস প্রকাশ করতে হয়েছিল এবং জয়লাভ করতে হয়েছিল। ঈশ্বর আব্রাহামের জীবনে একটি নতুন চাহিদা নিয়ে আসেন। যেই সন্তানকে অব্রাহাম ঈশ্বরের অলৌকিক শক্তির মাধ্যমে পেয়েছেন ঠিক সেই সন্তানকেই ঈশ্বর বলছেন যেন অব্রাহাম উৎসর্গ করে। শুরু তাই নয় নির্দিষ্টভাবে মোরিয়া এলাকায়।
এর আগে অব্রাহামকে ঈশ্বর বলেছিলেন ইশ্মায়েলকে দূরে পাঠাতে (আদি ২১:১২-১৩) এবং আব্রাহাম স্বেচ্ছায় ইশ্মায়েলকে বিদায় দিয়েছিলেন। এবারের ক্ষেত্রেও আলাদা কিছু ঘটে নি। যদিও কোন কিছুর জন্য অপেক্ষা করার সময় ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস করা এক ব্যাপার কিন্তু তা পাওয়ার পরে তাঁর কথা বিশ্বাস করা এবং মেনে চলা অনেকটাই ভিন্ন এক বিষয় কারন মানুষ জন্মগতভাবে সৃষ্টিকর্তার প্রতি অবিশ্বস্ত। অব্রাহাম কতটুকু ঈশ্বরের বাক্য মানবেন তারই পরীক্ষা ছিল এটি।
এক পলকে আমাদের কাছে মনে হতে পারে ঈশ্বরের এই আদেশটি অযৌক্তিক। ইসহাক প্রতিজ্ঞার সন্তান। ইসহাককে হত্যা করা, আপাতদৃষ্টিতে অন্তত, প্রতিশ্রুতিকে হত্যা করা। এখানে কি হচ্ছে? যদিও আব্রাহামকে বলা হয়নি, আমরা, পাঠকরা, জানি যে এই আদেশের একটি উদ্দেশ্য রয়েছে এবং তা হল আব্রাহামের বিশ্বাস পরীক্ষা করা (আদি ২২:১)। এই ঘটনার আগেও আমরা আব্রাহামের বিশ্বাসের যাত্রা পড়েছি এবং তার উত্থান-পতন অনুসরণ করেছি।
ইসহাকের জন্মের সাথে সাথে তার বিশ্বাসের নিশ্চিতকরণ হয়, কিন্তু এখন তার দুনিয়া উল্টে গেছে। তবু তার মধ্যে নেতিবাচক কোনো প্রতিক্রিয়া নাই।
আমরা এখানে অব্রাহামের অভ্যন্তরীণ জীবনের কোন বর্ণনা পাই না। আমরা জানি না তার মনে কী ইতিবাচক বা নেতিবাচক চিন্তা চলছে কি না। আমরা কেবল তার কাজ সম্পর্কে ধারণা করতে পারছি। সৃষ্টিকর্তার ঐশ্বরিক আদেশ ছিল, “তোমার ছেলেকে, অদ্বিতীয় ছেলে ইস্হাককে, যাকে তুমি এত ভালবাস তাকে নিয়ে তুমি মোরিয়া এলাকায় যাও। সেখানে যে পাহাড়টার কথা আমি তোমাকে বলব তার উপরে তুমি তাকে পোড়ানো-উৎসর্গ হিসাবে উৎসর্গ কর।” এর বিপরীতে আমরা দেখি তিনি খুব ভোরে উঠে একটা গাধার পিঠে গদি চাপান, তারপর তার ছেলে ইস্হাক ও দু’জন দাসকে সংগে নিলেন, আর পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য কাঠ কেটে নিয়ে যে জায়গার কথা ঈশ্বর তাকে বলেছিলেন সেই দিকে রওনা হন।
নির্ভরতার যাত্রাঃ
আমরা এখানে ঈশ্বরের নীতিশাস্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য আমাদের সময় ব্যয় করতে পারি, কিন্তু এটি আমাদের শক্তিকে ভুলভাবে স্থাপন করা হবে। পরিবর্তে, ঈশ্বরের সাথে তার সম্পর্ক, আব্রাহামের আত্মবিশ্বাসের লেভেল দেখে আমরা আশ্চর্য হই। তিনি তার জীবনের অনেক সময় ধরে সন্দেহ করেছেন, কিন্তু এখন তিনি প্রতিশ্রুতির পূর্ণতা দেখেছেন, তিনি বুঝতে পেরেছেন যে তিনি কী করছেন তা ঈশ্বর জানেন।
এমন নয় যে আব্রাহাম ইসহাকের জন্য চিন্তা করেন না। ঈশ্বরের আদেশটি ইসহাক আব্রাহামের একমাত্র প্রিয় সন্তান হওয়ার এবং তিনি তার সন্তানকে কতটা ভালবাসে তার উপর জোর দেন (আদি ২২:২)। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের এটাও মনে রাখা উচিত যে ইসহাক ঘটনার এই পর্যায়ে কোন শিশু নয়; সে একজন যুবক বা এমনকি একজন মানুষ যে তার কাঁধে কোরবানির জন্য কাঠ বহন করতে পারে এবং কী ঘটছে সে সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারে (আদি ২২:৭)। তিনি কি এখন তার ছেলেটিকে আঁকড়ে থাকবেন নাকি বাধ্য হয়ে তাকে প্রভুর কাছে ফিরিয়ে দেবেন? অন্য কথায় অব্রাহাম আনুগত্যে কতদূর যাবেন? তিনি কি সত্যিই বিশ্বাস করেছিলেন যে ঈশ্বর এখনও তার কথা রাখবেন এবং প্রতিশ্রুতির বীজ উত্তোলন করবেন?
আব্রাহামের প্রতিক্রিয়া ছিল বিস্ময়কর—তিনি তাৎক্ষণিক, প্রশ্নাতীত বাধ্যতা দেখিয়েছিলেন। ভোর হতেই তিনি রওনা দেন ঈশ্বরের বলা মোরিয়া এলাকায় যা ছিল তিন দিনের যাত্রার মত দীর্ঘ এবং কঠিন। বের্-শেবার থেকে মোরিয়া পর্বতের দূরত্ব ছিল প্রায় ৫০ মাইল! যে জায়গার কথা ঈশ্বর অব্রাহামকে বলে দিয়েছিলেন সেখানে পৌঁছানোর আগে ইস্হাক অব্রাহামকে জিজ্ঞেস করেন, “পোড়ানো-উৎসর্গের জন্য কাঠ আর আগুন রয়েছে দেখছি, কিন্তু ভেড়ার বাচ্চা কোথায়?” (আদি ২২:৭)।
ইসহাকের প্রশ্নের উত্তরে আব্রাহাম আবার তার বিশ্বাস প্রকাশ করলেন: “ঈশ্বর নিজেই তা যুগিয়ে দেবেন”। সেখানে পৌঁছে অব্রাহাম একটা বেদী তৈরী করে তার উপর কাঠ সাজালেন। পরে ইস্হাকের হাত-পা বেঁধে তাঁকে সেই বেদীর কাঠের উপর রাখলেন। তারপর অব্রাহাম ছেলেটিকে মেরে ফেলবার জন্য ছোরা হাতে নিলেন।
এমন সময় সদাপ্রভুর দূত স্বর্গ থেকে তাকে বলেন, “ছেলেটিকে মেরে ফেলবার জন্য হাত তুলো না বা তার প্রতি আর কিছুই কোরো না। তুমি যে ঈশ্বরভক্ত তা এখন বুঝা গেল, কারণ আমার উদ্দেশে তুমি তোমার ছেলেকে, অদ্বিতীয় ছেলেকেও উৎসর্গ করতে পিছ্পা হও নি” (আদি ২২:১২)।
আব্রাহাম যখন তার ছেলে ইসহাকের উপর ছুরি চালাতে যান, ঈশ্বর তাকে থামিয়ে দেন। আব্রাহাম বিশ্বাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। ঈশ্বর জানেন এবং আমরাও জানি যে তাঁর বিশ্বাস আসল। পরিবর্তে ঈশ্বর একটি বিকল্প প্রদান করেন, একটি মেষ যার শিং একটি ঝোপে ধরা পড়ে। পরবর্তীতে তা উৎসর্গ করা হয়।
একজন সত্যিকারের উপাসক ঈশ্বরের কাছ থেকে কিছুই আটকে রাখেন না কিন্তু তিনি যা চান তা বাধ্যতার সাথে দেন, বিশ্বাস করেন যে তিনি যুগিয়ে দিবেন। পুরো ঘটনাটি আব্রাহাম জায়গাটিকে যে নাম দিয়েছিলেন তাতে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছেঃ
“যিহোবা-যিরি” ( এর অর্থ “সদাপ্রভু যোগান”)।
এটি একটি সত্যের ভিত্তি যা প্রায়শই পুরাতন নিয়মে পুনরাবৃত্তি ঘটে: প্রভুকে তাঁর পবিত্র পর্বতে জাতির উপাসনা করতে হবে। "বছরে তিনবার [ইস্রায়েলের] সমস্ত পুরুষকে সার্বভৌম প্রভুর সামনে উপস্থিত হতে হবে" তাঁর উপাসনা করতে, তাদের নৈবেদ্য এবং বলি নিয়ে এসে (যাত্রা ২৩:১৭)। ঈশ্বরের কাছে যারা এসেছেন তাদের চাহিদা তিনি দেখতেন এবং পূরণ করতেন। এইভাবে জাতিকে যুগিয়ে দেবার মাধ্যমে জাতিগণের ঈশ্বরের সাথে "দেখা" হবে। তাকে "দেখা" হবে।
সত্য উপাসনা সম্বন্ধে শিক্ষাগুলি চিরন্তন: (1) বিশ্বাস সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের বাক্যকে মেনে চলে। (2) বিশ্বাস ঈশ্বরের কাছে সর্বোত্তমকে সমর্পণ করে, কিছুই আটকে রাখে না। (3) বিশ্বাস একজনের সমস্ত প্রয়োজন মেটাতে প্রভুর উপর অপেক্ষা করে।
সত্য উপাসনা প্রচন্দ ব্যয়বহুল! ঈশ্বর মানুষকে পরীক্ষা করেন তাদের আসল চরিত্র উন্মোচনের জন্য।
কনস্টান্টিনোপলের আর্চবিশপ জন ক্রিসোস্টম বলেছিলেন, “আব্রাহামের বিশ্বাস শুধুমাত্র আদেশ পালনের মধ্যেই ছিল না বরং প্রয়োজনে ঈশ্বর ইসহাককে মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত করতে পারেন বলে বিশ্বাস করেছিলেন। এই ধরনের বিশ্বাস মানুষের যুক্তিকে ছাড়িয়ে যায়।"