This is this sidebar for a particular page. It can be edited by editing a page from within the control pannel.
পৃথিবীর অন্যতম ধর্ম অনুসারীদের মধ্যে অব্রাহামীয় ধর্মে (ইহুদি-খ্রিষ্টান-ইসলাম) বিশ্বাসীদের সংখ্যা বৃহৎ। এই তিনটি ধর্মেই অব্রাহামকে বেশ সম্মানজনক দৃষ্টিতে দেখা হয় এবং ঈশ্বরের একজন নিকটবর্তী বিশ্বাসী হিসেবে মানা হয়।
কে ছিলেন এই অব্রাহাম যে কিনা হন বাইবেলের পুরাতন নিয়মের এক অন্যতম ব্যক্তি ? কেন তিনি বিশ্বাসের পিতৃপুরুষ হিসেবে পরিচিত? ঈশ্বর তাকে কিভাবে ব্যবহার করেছিল? আজ আমরা জানবো অব্রাহামের বিশ্বাসের এই যাত্রা কিভাবে শুরু হয় ।
অব্রাহাম কে?
বাইবেলের প্রথম বইটি হলো আদিপুস্তক। আদিপুস্তকের প্রায় ১২টি অধ্যায়েরও বেশি জায়গা জুড়ে অব্রাহামের জীবনী বর্ণনা করে হয়েছে। বাইবেলের পুরাতন নিয়মে বর্ণিত ইস্রায়েল জাতির পিতৃপুরুষদের মধ্যে প্রথম হলেন অব্রাহাম। অব্রাহাম নামটি হিব্রু শব্দ অভ্রাম (אַבְרָהָם ) থেকে এসেছে, যদিও বহু ভাষাতত্ত্ববিদেরা বলে থাকেন যে এই শব্দটির প্রকৃত অর্থ আমাদের জানা নাই। কিছু কিছু ভাষাতত্ত্ববিদেরা মনে করেন অব্রাহাম শব্দের অর্থ “বহুজাতির পিতা” কারণ আদিপুস্তকের ১৭:৫ পদে দেখা যায় ঈশ্বর অব্রামকে নতুন নাম দেন “অব্রাহাম” এবং এই নাম দেওয়ার পরে ঈশ্বর তাকে বহুজাতির পিতা হিসেবে সম্বোধন করেন। আমরা যদি অব্রাহামের অস্তিত্ব নিয়ে আলোচনা করি তাহলে প্রথমেই বাইবেল আমাদের জানায় তিনি নোহের বড় ছেলে শেম এর বংশধর। বাইবেলে বর্ণিত রয়েছে যে অব্রাহাম এবং তার বাবা পূর্বে বিভিন্ন দেবতায় বিশ্বাসী ছিলেন ( যিহোশুয় ২৪:২)।প্রাথমিকভাবে "অব্রাম" নামে তাকে নামকরণ করা হয়েছিল এবং তিনি ছিলেন তেরাহের তিন পুত্রের একজন। তিনি প্রথমজাত ছিলেন কিনা তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় না যদিও তার নাম প্রথমে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে (আদি ১১:২৬)।
ইস্রায়েল জাতির পৈতৃক বিবরণটি শুরু হয় দক্ষিণ মেসোপটেমিয়ার “উর” অঞ্চলে অবস্থিত তেরাহর গোষ্ঠীর সাথে। অব্রামের ভাই হারণের একজন পুত্র সন্তান “লোট” এবং দুই কন্যার (মিলকাহ এবং যিসকাহ) জন্ম হয়, কিন্তু হারণ “উর” অঞ্চলেই মারা যান। সেই অঞ্চলে থাকাকালীন অব্রাম সারাইকে বিয়ে করেছিলেন এবং তার ভাই নাহোর তার ভাগ্নী হারণের মেয়ে মিলকাকে বিয়ে করেছিলেন।
প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে পঁচাত্তর বছর বয়সে অব্রাম “হারণ” শহর ত্যাগ করেন এবং কনানে গিয়েছিলেন (আদি ১২:৪)। নিঃসন্তান দম্পতিঃ সারাই এবং অব্রাম, তাদের যাত্রায় লোট যুক্ত হয়। তারা শিখিম, বেথেল ও অয় পর্যন্ত গিয়েছিল এবং সেখানে অব্রাম প্রভুর উদ্দেশ্যে বেদি তৈরি করেছিলেন। পরবর্তীতে তারা দক্ষিণে নেগেভের দিকে অগ্রসর হয়েছিল (আদি ১২:৪-৯)।
হঠাৎ দুর্ভিক্ষ আসায় তারা মিশরে যেতে বাধ্য হয় এবং সেখানে ফরৌণ অব্রামকে মেরে ফেলার ভয়ে তার স্ত্রীকে তার নিজের বোন হিসেবে পরিচিতি দেন। ঈশ্বরের সতর্কতা ফরৌণের উপর আসায় প্রতারণার ফলে তাদের ঐ স্থান থেকে বের করে দেন প্রচুর সম্পদ দিয়ে সমৃদ্ধ করার পর (আদি ১২:১০-২০)। আমরা দেখতে পাই তিনি মিশরে যাওয়ার সময় আত্মরক্ষার একটি কৌশল তৈরি করেন যা হল তার স্ত্রী এর মিথ্যে পরিচয়। তিনি চিন্তিত যে সারাইয়ের সৌন্দর্যের কারণে তার জীবন বাজেয়াপ্ত হবে। অব্রাম কি তার স্ত্রীর যত্ন নিতে এবং তাকে রক্ষা করার জন্য ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেছিলেন? মোটেই না। কিন্তু ঈশ্বর তাদের সুরক্ষা এবং দুর্ভিক্ষ কাটিয়ে ওঠার পথ করে দেন।
মিশর ত্যাগ করার পর, আব্রাহাম তার ভাগ্নে লোটের থেকে আলাদা হয়ে যান এবং আরও দক্ষিণে কনানের হেব্রনে মম্রি গাছের কাছে তাম্বু স্থাপন করে (আদি ১৩:১৮)। ঈশ্বর এই নিঃসন্তান দম্পত্তিকে সুরক্ষিত রাখেন পুরো যাত্রা জুড়েই। কোনো সাম্রাজ্যের রাজা তাদের ক্ষতি করতে পারে নি। অব্রামের প্রতি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা অবিলম্বে পূর্ণ হয় নি। ঈশ্বর আব্রাহামকে মেসোপটেমিয়া (উর) থেকে কনান দেশে ডাকেন জমি, বংশ এবং আশীর্বাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যা শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যুর পরেই পূর্ণ হয়।
বিশ্বাসের পিতৃপুরুষঃ অব্রাহাম
আদিপুস্তক স্বাভাবিক অর্থে অব্রাহামের কোনো জীবনী উপস্থাপন করে না তাই আমাদের কাছে তার জীবনের টুকরো টুকরো গল্প দিয়ে অব্রাহামের জীবনীর পুনর্গঠন সীমিত। কিন্তু বাইবেল অব্রাহাম সম্পর্কে যতটুকু আমাদের জানায় তা থেকেই তার জীবনে বিশ্বাসের গুরুত্ব এবং মূল্য বুঝা সম্ভব।
অব্রাহাম যে কিনা প্রকৃত ঈশ্বরকে নয় বরং তার বাবার মতই অন্যান্য দেবতাদের উপাসনা করত সে কিভাবে প্রকৃত সত্য ঈশ্বরের সন্ধান পেল? কিভাবেই বা তিনি ইস্রায়েল জাতির ধর্মীয় বিশ্বাসের আদিপুরুষ হিসেবে বিবেচিত হলো? কারণ ঈশ্বর তাকে ডেকেছেন এবং অব্রাহাম বিশ্বাসে সাড়া দিয়েছিলেন। অব্রাহামের সংক্ষিপ্ত জীবনী থেকে আমরা জানতে পারি ঈশ্বর তাঁর আশীর্বাদ সমগ্র পৃথিবীর মানুষদের মাঝে নিয়ে আসবেনঃ বিশ্বাস দ্বারা (আদি ১২:১-২)।
অব্রাহামের জীবনের ঘটনাগুলোর মাধ্যমে আদিপুস্তকের লেখক প্রকাশ করেন কিভাবে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞামূলক আশীর্বাদ সকল মানুষের জন্য বাস্তবায়ন করা হবে (আদি ১:২৮, ৯:১,৭)।
অব্রাহামের প্রতি ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা মানবজাতির উদ্দেশ্যকে (আদি ১ ও ২) নবীন করেন। নোহের মতই অব্রাহামও দ্বিতীয় আদম ব্যক্তিত্ব হিসেবে রূপ পায়। আদমকে এদম বাগান দেওয়া হয়েছিল, অব্রাহামকে কনান দেশের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ঈশ্বর আদমকে ফলবান হতে এবং বংশবৃদ্ধি করতে আশীর্বাদ করেছিলেন, অব্রাহামকে আকাশের তারার মতো অসংখ্য বংশধরের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ঈশ্বর আদমের সাথে এদন বাগানে হেঁটেছিলেন, আব্রাহামকে ঈশ্বরের সাথে হাঁটতে বলা হয়েছিল (আদি ১৭:১)।
অব্রাহামের কাছে ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি মানবজাতির জন্য পরিত্রাণের পথ প্রতিষ্ঠা করেছে। অব্রাহামের মাধ্যমে একটি জাতিকে ঈশ্বর আশীর্বাদ করার জন্য বেছে নেন এবং সমগ্র বিশ্বকে আশীর্বাদ করার জন্য সেই জাতিকে ব্যবহার করেছিলেন এবং করবেন।
ঈশ্বরের ডাকে সাড়া দেওয়ার ফলঃ
অব্রাহামের মাধ্যমে ঈশ্বর বিশ্বের জন্য তাঁর পরিকল্পনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিবারের মধ্যে সংকুচিত করেন। এই পরিকল্পনাটি অব্রাহামের মাধ্যমে সমস্ত মানুষের জন্য আশীর্বাদের দিকে পরিচালিত করবে (আদি ১২:১-৩)। ঈশ্বরকে প্রায়শই "আব্রাহামের ঈশ্বর" হিসাবে উল্লেখ করা হয়। কেবলমাত্র ঈশ্বরের ডাক শুনেই অব্রাহাম বিশ্বাস দ্বারা তার জন্মভূমি এবং পরিবার ত্যাগ করে অন্য পরিবেশে বাস করেন। সৃষ্টিকর্তা তাকেই ইস্রায়েল জাতির পিতা হিসেবে বেছে নেন এবং মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য মসীহকে অব্রাহামের বংশের মধ্য দিয়েই জগতে পাঠান।
অব্রাহামের ইতিহাস আমাদের বুঝতে সাহায্য করে কিভাবে বিশ্বাসের হাত ধরেই ঈশ্বর একটি নিঃসন্তান পরিবারের মধ্য দিয়ে জগতের সকল পরিবারকে আশীর্বাদ করবেন। ঈশ্বরের ডাকে যখন কেউ সাড়া দেয় তখন ঈশ্বর তার নিকটবর্তী থাকেন। ঈশ্বরের ডাকে অব্রাহামের সাড়া এবং বাধ্যতা যেমন তাকে নতুন এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা দান করে ঠিক তেমনি ঈশ্বরের পরিকল্পনাও মানুষের সাথে মিলে বাস্তবায়ন হওয়ার চিত্র দেখা যায় বাইবেলে। ঈশ্বর মানব দুর্বলতার উপরে রাজত্ব করেন যার ফলে ঈশ্বরের আশীর্বাদে অব্রাহাম ও সারা ইসহাকের জন্ম দেন । প্রতিজ্ঞাত দেশ অব্রাহাম নিজে না পেলেও তার বংশধরেরা ঠিকই তা পেয়েছিলেন।
ঈশ্বরকে সম্পূর্ণরূপে বোঝার পূর্বে যেই বিশ্বাস সেই বিশ্বাসের অধিকারী ছিলেন অব্রাহাম। অব্রাহামের জীবনের অন্তত ১৮টি ঘটনা বাইবেলের নতুন নিয়মে উল্লেখ করা রয়েছে। উত্তরাধিকারস্বরূপ আব্রাহামের সাথে তাঁর চুক্তির কারণে ঈশ্বর প্রায়ই ইস্রায়েল জাতিকে রক্ষা করেছিলেন এবং জাতিকে উদ্ধার করেছিলেন (যাত্রা ২:২৪, গীত ১০৫:৪২)।
তৃতীয় শতাব্দীর আর্চবিশপ জন ক্রিসোস্টোম বলেনঃ “অব্রাহাম বিশ্বাস করার সাথে সাথে প্রতিজ্ঞাত দেশ পাননি, বা প্রতিশ্রুতি তাৎক্ষণিকভাবে পূরণ হয়নি। তার বিশ্বাসের উদাহরণের মাধ্যমে তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, যে ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতিগুলি ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করতে হবে, এমনকি যদি তাৎক্ষণিক কোনো পুরস্কার নাও থাকে।”
আপনি কি বিশ্বাসে সৃষ্টিকর্তার ডাকে সাড়া দিয়েছেন?
References:
Pyles, A. R. (2016). Abraham. In J. D. Barry, D. Bomar, D. R. Brown, R. Klippenstein, D. Mangum, C. Sinclair Wolcott, L. Wentz, E. Ritzema, & W. Widder (Eds.), The Lexham Bible Dictionary. Lexham Press.
Longman, T., III. (2005). How to read Genesis. IVP Academic.
Wenham, G. J. (2000). Story as Torah: reading Old Testament narrative ethically. T&T Clark.
Chrysostom, John. Homilies on Genesis, Homily 35.3
Heitzig, S. (2019). Bloodline: tracing god’s rescue plan from eden to eternity. Harvest House Publishers.