This is this sidebar for a particular page. It can be edited by editing a page from within the control pannel.
মানবজাতির ইতিহাসে খুন একটি অতি প্রাচীন অপকর্ম। মানুষ কেন একে অপরকে হত্যা করে? কেন একটি জীবন আরেকটি জীবনের মৃত্যু ঘটায়? যুদ্ধের শুরুই কি এক জাতির সাথে আরেক জাতির দ্বন্দ্বের কারনে নাকি এই দ্বন্দ্বের শুরু হয় পরিবারের সদস্যদের থেকে? বাইবেলের “আদিপুস্তক” বা “জেনেসিস” এর চতুর্থ অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয় মানবজাতির প্রথম খুন। এক ভাই আরেক ভাইকে হিংসা ও রাগের কবলে পড়ে হত্যা করে।
বাইবেলে যেকোনো “প্রথমদের” ঘটনার উল্লেখ খুবই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়ে থাকে। কয়িনের হেবলকে খুন করা মানবজাতিরই একটি চিরচলিত গল্পের প্রথম ধারাকে ইঙ্গিত করে। এই ঘটনা মানুষের একে অপরের সাথে সম্পর্ক, মানুষের ত্রুটিপূর্ণ স্বভাব এবং ঐশ্বরিক বিচারকে বুঝতে আমাদের পথ করে দেয়।
প্রথমদের একটি ঘটনাঃ
কয়িন ও হেবলের ঘটনা বাইবেলের প্রথমদের একটি গল্প। আদিপুস্তকে এই প্রথম খুনের বর্ণনা (আদি ৪ঃ১-১৬), খুনির বিচার (আদি ৪ঃ১০-১২) এবং “পাপ” এর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। এক ভাইয়ের প্রতি অন্য ভাইয়ের সহিংসতা কিভাবে মৃত্যুর জন্ম দেয় তা খুব সরলতার সাথে গড়ে তুলেছে আদিপুস্তকের লেখক। ঐতিহাসিক পরম্পরায় মোশিকে আদিপুস্তকের লেখক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়ে থাকে এবং এই মোশিও তার জীবনের এক প্রান্তে গিয়ে এক মিশরীয়কে খুন করে (যাত্রা ২ঃ১২)। মোশি যে কিনা একজন প্রাক্তন খুনি পরবর্তীতে সৃষ্টিকর্তার ভাববাদী হয়ে ইব্রীয়/ইহুদি জাতিকে মিশর থেকে মুক্ত করে ঈশ্বর প্রদত্ত শক্তি দ্বারা। এই ব্যক্তি মানবজাতির প্রথম খুন সম্পর্কে তার পাঠকদের কি বুঝাতে চান তা কয়িন ও হেবলের ঘটনাটি পড়লে আমরা জানতে পারবো।
ঈশ্বরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরেও সাপের প্রলোভনে হবা ও আদম “ভালো ও মন্দ জ্ঞানের” ফল খায় যার ফলে তাদেরকে এদন বাগান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। বাগানের বাহিরে আদম ও হবার দুইটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়; কয়িন যে কিনা অভিশপ্ত জমিতে চাষ করতো এবং হেবল যে ছিল মেষপালক। এই ঘটনাতেই প্রথম মানুষদের ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উপহার হিসেবে উৎসর্গ করতে দেখা যায়ঃ কয়িন তার ভুমির ফল উৎসর্গ করে আর হেবল তার পালের প্রথমজাত কয়েকটি পশু ও পশুর চর্বিযুক্ত অংশ উৎসর্গ করে। কিন্তু ঈশ্বর কয়িনের উৎসর্গ গ্রহন করেন নি বরং হেবলের উৎসর্গকে গ্রহন করেন। এর ফলে কয়িন রাগ করে ও বিষণ্ণ হয়ে থাকে। এতে ঈশ্বর কয়িনকে বিষণ্ণ দেখে সতর্ক করেন ভালো কাজ করার জন্য যেন পাপ তাকে বশ করতে না পারে বরং কয়িন যেন পাপকে বশে রাখতে পারে (আদি ৪ঃ৩-৭)।
অথচ কয়িন ঈশ্বরের কোন সতর্কতা মান্য না করেই তার নিজের ভাইকে জমিতে হত্যা করে। হত্যা করার পর ঈশ্বর যখন কয়িনকে হেবলের কথা জিজ্ঞেস করেন, কয়িনের কথার ধরন ও তার মিথ্যা বলার মাধ্যমে সে ঈশ্বরের কাছে দোষী হিসেবে বিবেচিত হয়। ঈশ্বর কয়িনকে শাস্তিস্বরূপ পৃথিবীতে পলাতক হিসেবে বেঁচে থাকতে বলেন এবং কয়িন যেহেতু জমিতে চাষ করতো এখন জমিতে চাষ করলেও জমি সেই ফলন তাকে আর দিবে না। ঈশ্বরের এই শাস্তি সহ্য করার মত নয় বলে প্রকাশ করে কয়িন কারন ঈশ্বরের থেকে দূরে থাকায় যে কেউ কয়িনকেও খুন করতে পারে। ঈশ্বর তার শাস্তি লঘু করেন কয়িনকে একটি চিহ্নের ব্যবস্থা করে যার ফলে কেউ কয়িনকে খুন করলে তার উপর সাতগুণ প্রতিশোধ নেওয়া হবে। পরবর্তীতে কয়িন ঈশ্বরের উপস্থিতি থেকে সরে এদনের বাইরে আরো পূর্বদিকে নোদ নামক এক দেশে বাস করতে থাকে।
আমাদের প্রচেষ্টা যখন অন্যদের কাছে এমনকি ঈশ্বরের চোখেও উপেক্ষিত হয় তখন আমাদের প্রতিক্রিয়া কি হয়? হিংসা? রাগ? খুন করার মনোভাব? মানুষ যদি ভালো কাজ করে তাহলে কি ঈশ্বরের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে? কিন্তু যদি আমরা সঠিক কাজ না করি তাহলে পাপ একটি জীবন্ত প্রাণীর মত আমাদের গ্রাস করবার জন্য জন্য অপেক্ষা করেছে । আমরা কি আমাদের অতীতের জন্য তিক্ত নাকি অতীতের চেয়ে ভালো হবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
প্রথম খুনের কারনঃ
পাপ যেহেতু মৃত্যুর জন্ম দেয় তাই খারাপ উদ্দেশ্য কিংবা মনোভাব পাপ করার বাসনা জাগ্রত করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে কয়িন ও হেবলের ঘটনায় আদমকে তাদের বাবা হিসেবে কোনো দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় না এবং ঈশ্বর কয়িনের উৎসর্গ গ্রহন না করার পরও কয়িনের সাথে কথা বলেন। পরিবারের বন্ধন ও শিক্ষা কয়িনের মধ্যে না থাকার একটি অন্যতম কারন হতে পারে আদমের অনুপস্থিতি। “পাপকে বশে না রাখলে পাপ আমাদের বশে রাখবে” বলে ঈশ্বর কয়িনকে জানায় কিন্তু কয়িনের মনের বাসনা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার সতর্কতাকে উপেক্ষা করে পাপের বশীভূত হয়ে নিজ ভাই হেবলকে হত্যা করে। পাপ হৃদয়ে শুরু হয়, অনিয়ন্ত্রিত থাকলে বৃদ্ধি পায় এবং ধ্বংসাত্মক কর্মের দিকে মানুষকে পরিচালিত করে। ঈশ্বরকে উপহার দিতে উৎসর্গ করার মধ্য দিয়েই এই ঘটনার শুরু, এই উৎসর্গ পরবর্তীতে ঈশ্বরকে উপাসনা করার এক মাধ্যম হিসেবে স্থায়িত্ত পায়। তবে মানুষ কেন ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেওয়ার পরও মনে হিংসা এবং ক্ষোভ নিয়ে বাস করে? কারন মানুষ তার মনের ত্রুটিপূর্ণ বাসনাগুলো দমন করতে অক্ষম।
ঈশ্বরের উপাসনা করতে হলে হৃদয় থেকে তা করা প্রয়োজন। কে কিভাবে ঈশ্বরকে উপহার দিচ্ছে এর থেকে তাদের হৃদয় কেমন তা বেশি জরুরি। কয়িন তার ফসল উৎসর্গ করার পর ঈশ্বর তা গ্রহন করেন নি এবং এর কারন হিসেবে ধরা যেতে পারে কয়িন তা সঠিক মন দিয়ে করে নি।
খুনের মাধ্যমে কয়িন হারায় তার ভাই কিন্তু এরপরও তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা দেখা যায় নি। বরং ঈশ্বর হেবলের কথা জিজ্ঞেস করলে কয়িনের উত্তর হয়ঃ “আমি কি আমার ভাইয়ের রক্ষক?” (আদি ৪ঃ৯)। ঈশ্বর ধার্মিকের প্রতি বধির নন, ধার্মিকদের কান্না ঈশ্বর শুনেন এবং তাদের বিরুদ্ধে অন্যায় হলে তাঁর সঠিক ন্যায় ও বিচার তিনি অবশ্যই স্থাপন করবেন।
পাপ হল জলপ্রপাতের মতো, এটি একটি নিম্নগামী স্রোতের ধারার দিকে নিয়ে যায় যা থামানো যায় না। আমরা কিভাবে আমাদের নিজেদের পাপ করার বাসনাকে দমন করতে পারি? পাপকে কি আদৌ আমরা বশীভূত করতে পেরেছি?
চতুর্থ শতাব্দীর থিওলোজিয়ান এবং বিশপ থিওডোরেট অব সাইপ্রাস বলেন, “কয়িন দুঃখিত হয় নি তার নিজের পাপের জন্য, কিন্তু সে দুঃখার্ত কারন তার ভাই ঈশ্বরের চোখে গ্রহণযোগ্য।”
REFERENCES:
Image: Titian Cain and Abel, 1542–44, Oil on canvas, 298 x 282 cm, Santa Maria della Salute, Venice; Erich Lessing / Art Resource, NY
Theodoret of Cyrus, Question 41 on Genesis
আদি ৪ঃ১-১৬
আদি ৪ঃ১০-১২
যাত্রা ২ঃ১২
(আদি ৪ঃ৩-৭)