This is this sidebar for a particular page. It can be edited by editing a page from within the control pannel.
পৃথিবী সৃষ্টির বাইবেলে বর্ণিত কাহিনি ১-২
তোমরা কি জানো বাইবেল কি?পবিত্র বাইবেল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থ হিসেবে পরিচিত। ইতিহাস বলে, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের পর বৃটিশ খ্রিস্টান মিশনারীরা বাংলাদেশে ধর্ম প্রচার করতে আসেন। আমরা জানি শাব্দিক অর্থে বাইবেল অর্থ পুস্তক। ভূমধ্যসাগর উপকূলে বর্তমান বৈরুতের নিকটবর্তী প্রাচীন ফনিশিয়া রাজ্যের একটি শহরের নাম ছিল বিব্লস, যেখান থেকে প্রাচীন গ্রিকরা কাগজ আমদানি করত। এজন্য প্যাপিরাস বা কাগজ, প্যাপিরাস বান্ডলকে বিবলস এবং কাগজে লিখা ছোট পুস্তককে বিবলিয়ন নামে পরিচিত ছিল। পরে বিবলস শব্দ থেকেই ল্যাটিন ভাষার মাধ্যমে বিবলিয়া থেকে বাইবেল শব্দটি এসেছে। মধ্যযুগের মানুষেরা বাইবেলের পুস্তকগুলোকে একীভূত অস্তিত্ব হিসেবে গণ্য করতো।
প্রাক-পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস :
যদি জানতে চাও প্রাক-পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস, তবে হাতে নাও বাইবেলের প্রথম খন্ড! বাইবেলের প্রথম খন্ডে যা বলা হয়েছে সেটা একই সাথে খ্রিস্টান এবং ইহুদিদের পৌরাণিক কাহিনি। এখানে আলোচিত হয়েছে ঈশ্বর কত দিনে পৃথিবী ও স্বর্গ সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টির প্রারম্ভে পৃথিবী নিরাকার,শূন্য, ও গভীর অন্ধকার ছিল। আধুনিক বাইবেলের আলোচনায় পন্ডিতরা বলেন, ঈশ্বর বা ইলোহিম (হিব্রু ভাষার শব্দ) ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আশীর্বাদ করে সপ্তম দিন ঐশ্বরিক বিশ্রাম গ্রহণ করেন।
সৃষ্টির ৬দিনের কাহিনি :
বাইবেলের প্রথম খন্ড পড়া শুরু করলেই তুমি পাবে সৃষ্টির ৬দিনের কাহিনি। সৃষ্টির কাহিনি দুইটি গল্প নিয়ে গঠিত। প্রথম গল্পে দেখবে ঈশ্বর বা ইলোহিম নিজের দ্বারাই স্বর্গ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। এখানে দেখবে প্রতিটি দিনে আকাশ, বাতাশ, জল, চন্দ্র, সূর্য সবকিছু ঐশ্বরিক পরিকল্পনায় সাজিয়ে সবশেষে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপর আকাশে পাখি, জলে মাছ দিয়ে জনবহুল করা হয়েছে মানুষ বসবাসের জন্য।
দ্বিতীয় গল্পে প্রথম মানুষ আদমকে ধূলিকণা থেকে সৃষ্টি করে ইডেন বাগানে রাখা হয়। তার সঙ্গী হিসেবে প্রথম মহিলা ইভকে সৃষ্টি করা হয় আদমের বাম পাজর থেকে। সেখানে তাদের পশুদের উপর কতৃত্ব দেওয়া হয়। সৃষ্টির কাহিনি নিয়ে দুটি গল্প শেষে একত্রিত হয়েছিল সেটা নিয়ে তেমন মতৈক্য নেই।
ঈশ্বর ছয়দিনে কিভাবে পৃথিবী সৃষ্টি করলেন জানতে চাও? তাহলে নিচের প্রবন্ধ পড়তে হবে।
প্রথম দিন: দিন-রাত্রি নির্ধারণ
ঈশ্বর প্রথম দিন বললেন, আলো হোক! তার কমান্ড হওয়া মাত্রই সেটি হয়ে যায়। তিনি আলোকে দিন এবং অন্ধকারকে রাত্রি নাম দিলেন। এরপর সময় সৃষ্টি করেন সকাল এবং সন্ধ্যা এভাবে একদিন। তিনি মহা পরাক্রম শক্তির অধিকারী তাই ঐশ্বরিক সৃজনশীলতায় সাজিয়েছেন পৃথিবী। বাইবেল সম্পূর্ণ নিরবতার সাথে তুলে ধরেছে ঈশ্বরের আদেশ এবং সৃষ্টি রহস্য!
দ্বিতীয় দিন: আকাশ এবং জলের পৃথককরণ
দ্বিতীয় দিন কি হলো জানো? ঈশ্বর জল এবং আকাশ তৈরি করলেন। আকাশের উপরের জল আর নিচের জলকে ভাগ করলেন এবং নাম দিলেন। আকাশের উপরে থাকা জলকে নাম দিলেন স্বর্গ। পৌরাণিক কাহিনিতে জল ছিল একটি প্রাথমিক উৎপাদক শক্তি। প্রাচীন সৃষ্টিতত্ব মতে, পৃথিবী একটি সমতল চাকা যার উপরে ও নিচে জল রয়েছে। উপরের জল হল বৃষ্টিপাতের উৎস আর নিচের জলে স্তম্ভ দ্বারা পৃথিবী সমর্থিত। এরপর সন্ধ্যা হওয়ার মধ্যে দিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ হলো।
তৃতীয় দিন: পৃথিবী ও সমুদ্রের নামকরণ
তৃতীয় দিন ঘটল আরেক বিষ্ময়কর সৃষ্টি! ঈশ্বর চাইলেন আকাশের নিচের সব জল এক জায়গায় জড়ো হোক যার নাম দিলেন সমুদ্র। আর বাকি শুকনো ভূমির নাম দিলেন পৃথিবী। এবার তিনি চাইলেন শুষ্ক ভূমিতে উদ্ভিদ, ঘাস, ফল-বৃক্ষ হোক যার বীজ পৃথিবীতে আছে। এভাবে অনুর্বর পৃথিবীকে সবুজ গাছপালায় সুশোভিত করে তৈরি করলেন। মানুষের কৃষি নির্ভর সমাজ ব্যবস্থা চালু করার জন্য এটা দরকার ছিল। কারণ, জলবায়ু বা কৃষি বিপর্যয় হলে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে সৃষ্টি হতে পারে মহা দুর্ভোগ। প্রাকৃতিক জগৎ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য ভাল হিসেবে বর্ণনা করেছেন ঈশ্বর। এভাবে স্বর্গ, সমুদ্র, পৃথিবী ক্রমান্বয়ে জনসংখ্যাযুক্ত হয়েছিল।
চতুর্থ দিন: আলোকিত দিন ও অন্ধকার রাত্রির আলো
চতুর্থ দিন কি হলো জানতে চাও? ঈশ্বর স্বর্গের আলোকে পৃথিবীতে ভাগ করে দিলেন। দিনের বেলার জন্য বৃহত্তর আলো এবং রাত্রির জন্য ছোট আলো তৈরি করলেন। দিন ও রাতের উপর কর্তৃত্ব করতে ঋতু, দিন ও বছর সৃষ্টি করলেন। বৃহত্তর আলো হিসেবে দিনে সূর্য এবং রাতে কম আলোর জন্য চাঁদ দিলেন। চতুর্থ দিনের বিবরণ হিসেবে বলা যায়, সূর্য ও চাঁদ ঈশ্বরের নির্দেশে চলে তাই তাদের উপাসনা করা হলো সময় নষ্ট করা। এই দিনে শাসক ভাষা চালু হয়, স্বর্গীয়ভাবে দিনরাত্রি শাসন করে ঋতুচক্র পরিচালিত হবে। এভাবে ঋতুচক্র হিসেবে চন্দ্র-সূর্যের ক্যালেন্ডার তৈরি হয় যা ১২ বা ১৩ মাস হতে পারে।
পঞ্চম দিন: জলের জীবন্ত প্রাণী ও আকাশের পাখি বৃদ্ধিকরণ
পঞ্চম দিনে হলো আরেক আশ্চর্য ঘটনা! এই দিন ঈশ্বর জল ও আকাশের জন্য প্রাণী সৃষ্টি করলেন। তিনি বললেন,জলে জীবন্ত প্রাণী বৃদ্ধি হোক এবং আকাশে পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি হোক। এই দিনে সৃষ্টি অন্য দিনের চেয়ে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী। কেনো জানতে চাও?
কারণ জল ও আকাশের প্রাণীরা এই দিন ঈশ্বরের আশীর্বাদ লাভ করেছিল। ফলে ঝাঁকে ঝাঁকে সংখ্যা বৃদ্ধি করে আকাশে পাখিরা এবং সমুদ্রে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ ও অন্যান্য প্রাণী আধিপত্য বিস্তার করলো।
ষষ্ঠ দিন: স্থল প্রাণী ও নিজের প্রতিচ্ছবিতে মানুষ সৃষ্টিকরণ
এখন আমরা জানবো সৃষ্টির শেষ দিন কি হয়েছিল! তবে এই দিনের সৃস্টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কারণ মানুষকে এই দিনে সৃষ্টি করে সমস্ত সৃষ্টির উপর কর্তৃত্ব করার অধিকার দেওয়া হয়। মানবজাতিকে সৃষ্টি করা হয় ঈশ্বরের মূর্তিতে। এই পর্যন্ত যা কিছু সৃষ্টি করা হয়েছে সবকিছু মানুষের কল্যাণ্যে ব্যবহার করার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। এই দিন ঈশ্বর আরো স্থল প্রাণী সৃষ্টি করে তাদের তিনটি ভাগে ভাগ করেন, যেমন: গৃহপালিত, পশুপালের প্রাণী এবং বন্য শিকারী। ঈশ্বর মানবজাতিকে আশীর্বাদ করেন ঈশ্বরের রাজ্যকে প্রসারিত করে সন্তান জন্মদান ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যাবহার করতে এবং প্রাণীদের উপর আধিপত্য বজায় রাখতে।
সমগ্র সৃষ্টির পরে তার সৃষ্টির সবকিছুই খুব ভালো ছিল এবং মানবজাতির কল্যাণে ব্যবহার হবে। এবং সৃষ্টির মুকুট মানুষের উপর আদেশ হলো ঈশ্বরের সেবা করা অর্থাৎ উপাসনা করা।
সপ্তম দিন: পবিত্র বিশ্রামের দিন
সৃষ্টির সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে ঈশ্বর সপ্তম দিন কি করলেন জানো? তিনি ঐশ্বরিক কাজ থেকে বিশ্রাম নিলেন। এই দিনটিকে তিনি আশীর্বাদ করে পবিত্র করলেন। আসলে তিনি মানুষকে শিক্ষা দিলেন সপ্তাহে ছয়দিন কাজ করে সপ্তম দিন বিশ্রাম নিবে। এবং বিশ্রামের দিনটিকে পবিত্র রাখতে বলেছেন। ঈশ্বর এই দিনটিকে বিশ্রাম ও উপাসনায় কাটানোর সুস্পষ্ট নির্দেশ দিলেন।
উপসংহার :
এভাবে বাইবেলের কাহিনি পড়তে থাকলে জানবে সৃষ্টির অনেক অজানা ইতিহাস। সঠিকভাবে বাইবেলীয় ইতিহাস বুঝলে পাঠক হিসেবে নিজের জ্ঞান অর্জন সফল হবে। প্রভু যীশুর সন্ধানে বাইবেলের পান্ডুলিপি ২০০ বছরের ও বেশি সময় ধরে পণ্ডিতদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছে। সৃষ্টির রহস্য খুঁজতে গিয়ে বাইবেলের দ্য গার্ডেন অফ ইডেন থেকে আদম এবং ইভকে পৃথিবীতে পাঠানোর কাহিনি জানতে পারবে এই প্রথম খন্ডে।